৬:০৮ এএম, ১৯ জানুয়ারী ২০২১, মঙ্গলবার |
| ৫ জমাদিউস সানি ১৪৪২
আসিফ নজরুল: এই অভূতপূর্ব উন্নয়ন আমাদের নানা বিপদেও ফেলছে। সবচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জবাবদিহিতার অভাব...
প্রায় একযুগ আগে আমি আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বা আইডি খুলি। প্রথম যে ছবিটা দেই তাতে লাইক দেয় তিনজন মানুষ। তখন নিতান্ত অবহেলায় সাত আট দিন পর পর দেখতাম আর ভাবতাম এই নিষ্প্রাণ নির্বিকার জিনিসটার আসলে দরকার কি!
এর বছর খানেক পর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছাত্র পিয়াস আহমেদ আমার নামে একটা ফ্যান পেজ খোলেন। সে আমার টক-শোর ভক্ত এবং এ পরিচয়ে সে আমাকে ফ্যান পেজটির জয়েন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর করে দেয়। বছর তিনেক পরে বোস্টনের নামকরা অনকোলজিস্ট কামরুল হাসান শুভ্রের পরামর্শে আমি প্রথম এ পেজটিতে টুকিটাকি লিখতে থাকি। তখন থেকে গত আট বছরে এর ফলোয়ার বাড়তে থাকে দ্রুতগতিতে।
এখন এ পেজে ফলোয়ারের সংখ্যা ছয় লাখের ওপরে। আমার স্নেহভাজন ছাত্রনেতা ডাকসু ভিপি নূরের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করি মাস ছয়েক আগে। দেখি চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সেটা পছন্দ করে লাইক দিয়েছে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক তাই আমার কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। টেলিভিশন টক-শোতে আমার এখন যাওয়া হয় না বহু বছর ধরে। পত্রিকার লেখালেখিতেও রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতা। আমার তাতে অসুবিধা হয় না তেমন। আমার ফ্যানপেজে কিছু একটা মন্তব্য করলে তা নিমিষে পৌঁছে যায় কয়েক লাখ মানুষের কাছে, এমনকি সেটা দেশের কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় ছাপা হয়ে যায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। কোনো কোনো মন্তব্য ইউটিউবে পড়ে শোনানো হয় আমার ছবি দিয়ে। আশ্চর্য হয়ে দেখি সেটিও কখনো কখনো দেখে লক্ষাধিক মানুষ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যে কতটা শক্তিশালী তা আমি নিজের জীবনের ঘটনা থেকে বুঝতে পারি। এ ছাড়া বহু ঘটনা যেমন তনু হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ, আবরার হত্যার বিরুদ্ধে আন্দোলন, কোটা সংস্কার বা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকালে দেখেছি এর প্রভাব কতটা প্রবল, শক্তি কতটা জোরালো।
২.
একটা জিনিস প্রথমেই পরিষ্কার নেওয়া উচিত যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলতে এ দেশে মূলত ফেসবুককেই বোঝায়। পশ্চিমের দেশগুলোতে টুইটার বা ইউটিউব ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। বাংলাদেশে টুইটার ব্যবহৃত হয় খুব কম, ইউটিউব ব্যবহৃত হয় মূলত বিনোদন মাধ্যম হিসেবে। যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে আমরা মূলত ফেসবুককেই বুঝি বাংলাদেশে।
ফেসবুক বাংলাদেশে এতটা শক্তিশালী হয়েছে যে, কখনো মূলধারার সংবাদমাধ্যম অনুবর্তী হয়েছে এর। ভীত, ভ্রান্ত বা অনীহ হয়ে যে সংবাদ ছাপাতে দ্বিধায় থাকে মুদ্রিত সংবাদপত্র সেটিই আবার ফেসবুকে তুমুল আলোচিত হওয়ার পর তা প্রকাশে শামিল হয়। সংবাদপত্রের একজন কর্মীকে পাওয়া যাবে না যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংযুক্ত নয়। ফলে ভাইরাল হওয়া বিষয় কারও নজর এড়িয়ে যাওয়াও সম্ভব হয় না।
ফেসবুক ও অন্যান্য কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আরেকটি সুবিধা হচ্ছে এটি সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ করে দেওয়া যায়। ব্যবসায়িক সুনাম নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না বলে, প্রকাশে কোনো সময়, অর্থ বা আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন হয় না বলে এতে যে কোনো পত্রিকার অনলাইনের চেয়েও দ্রুত সংবাদ বা মতামত প্রকাশ করা যায়। লাইক, কমেন্ট আর শেয়ার করা খুব সহজ বলে এতে সংবাদ ও মতামতের প্রতিক্রিয়াও যাওয়া যায় অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে।
এসব সুবিধা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে এমন অমিত শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক, টুইটার, ইন্সট্রাগ্রাম আর ইউটিউবের কারণে প্রথাগত যোগাযোগ মাধ্যম পাঠক ও বিজ্ঞাপন হারিয়ে পড়েছে মহাদুর্যোগে। ইউরোপ, আমেরিকা বা ভারতেও মূল ধারার পত্রিকার আকার সংক্ষিপ্ত হয়েছে, অধিকাংশ পত্রিকা এখন বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে, কোনো কোনো মুুদ্রিত সংবাদপত্র বিলুপ্ত হয়ে শুধু ডিজিটাল ভার্সনে বা অনলাইনে প্রকাশিত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কেন্দ্রিক পেশাদারি সাংবাদিকতা সৃষ্টি হচ্ছে। আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতিটি ব্যবহারকারী হয়ে পড়ছেন এক একজন নাগরিক সাংবাদিক।
এই অভূতপূর্ব উন্নয়ন আমাদের নানা বিপদেও ফেলছে। সবচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জবাবদিহিতার অভাব। যা ইচ্ছে যা খুশি সেখানে ছাপিয়ে দেওয়া যায়। সত্যি বটে মাঝে মাঝে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অভিযোগ পেলে কিছু পোস্ট সরিয়ে ফেলে, দেশের প্রচলিত আইনেও এজন্য বিচারের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু এর পরিমাণ খুব কম। এত বিশাল ফেসবুকের বিস্তার যে এর পুরোটা জবাবদিহিতার আওতায় আনাও প্রায় অসম্ভব বিষয়।
বাংলাদেশের মতো অনুন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অপব্যবহারের জন্য দায়ভোগও করতে হয় শুধু সরকারবিরোধী বক্তব্যের জন্য। ফেসবুকে সরকারের লোকজন বিরোধীদের সম্পর্কে অবমাননাকর বা আক্রমণাত্মক মন্তব্য করে বিচারের মুখোমুখি হয়েছে এটি অতিবিরল। আবার ফেসবুকে গুজব রটানোর জন্য এ দেশে ছেলেধরা অপবাদে নির্দোষ মায়ের গণপিটুনিতে মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এসব দায়িত্বহীন গুজব রটানোর জন্য কারও শাস্তি হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে কারণে সেলফ-রেগুলেশন বা নিজে নিজে কিছু আচরণবিধি মেনে চলা জরুরি হয়ে পড়েছে। জরুরি হয়ে পড়েছে এসব আচরণবিধি সম্পর্কে আলোচনা। কিন্তু তার আগে এটি জানা প্রয়োজন যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাংলাদেশের সংবিধানেও অবাধ বা সীমাহীন নয়।
৩.
বাংলাদেশের সংবিধানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ যে কোনো মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও আশা করা হয়েছে যে, এই স্বাধীনতা ব্যবহার করতে গিয়ে প্রত্যেক নাগরিক যেন দায়িত্বজ্ঞানের পরিচয় দেয়। এ স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতা, আদালতের মর্যাদার প্রতি সম্মান প্রদর্শন, মানহানি অথবা অপরাধে উসকানি প্রদান হতে বিরত রাখার স্বার্থে যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ আরোপের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে জাতীয় সংসদকে।
অর্থাৎ আমাদের দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিঃশর্ত নয়। শালীনতা, নৈতিকতা, মানহানি বা অপরাধে উসকানি প্রদান হতে বিরত থাকা ইত্যাদি কিছু নিয়মনীতি মেনে চলা সাপেক্ষে এই স্বাধীনতাটি উপভোগ করা যেতে পারে।
সংবিধানের এই অনুচ্ছেদটির সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইনের কিংবা বিশ্বের অন্যান্য আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সমাজ ব্যবস্থার কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদসমূহে বলা হয়েছে, বাকস্বাধীনতা কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্যেরও জন্ম দেয়। আর তাই আইন দ্বারা আরোপিত এবং গণতান্ত্রিক সমাজে প্রয়োজনীয় কিছু আনুষ্ঠানিকতা, শর্ত ও বাধানিষেধ সাপেক্ষে এই স্বাধীনতা উপভোগ করা উচিত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মতপ্রকাশের ওপর তাই রাষ্ট্র রেসট্রিকশন বা সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে পারে। তবে এ সীমাবদ্ধতা ইচ্ছামতো আরোপ করা যাবে না। আমাদের সংবিধান অনুসারে এসব রেসট্রিকশন অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত হতে হবে, আইন দ্বারা আরোপিত হতে হবে এবং জনস্বার্থ বা জনশৃঙ্খলার মতো কারণভিত্তিক হতে হবে। কোনো অযৌক্তিক আইন করে বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হলে হাই কোর্টের ক্ষমতা রয়েছে সেই আইনকে সংবিধান পরিপন্থী ও অবৈধ ঘোষণা করার।
আমাদের প্রচলিত আইনগুলোর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর সবচেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে আইসিটি আইন ও সাম্প্রতিক ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে। এসব নিয়ন্ত্রণের অনেক কিছুই যুক্তিসঙ্গত বা সমানুপাতিক নয়। এগুলো জনস্বার্থে নাকি শুধু শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থে আরোপ করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু বিধান রয়েছে প্রেস কাউন্সিল প্রণীত আচরণবিধিতে। এ আচরণবিধি সাংবাদিকদের জন্য প্রণীত হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা সিজিটেন জার্নালিজম করেন তাদের ক্ষেত্রেও দিক-নির্দেশনা প্রদান করার মতো।
গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় যে সংস্থাটি কাজ করছে সেটি হচ্ছে প্রেস কাউন্সিল। এটি ১৯৭৪ সালের প্রেস কাউন্সিল আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ আইনে সাংবাদিকদের জন্য আচরণবিধি তৈরির কথা বলা হলেও আচরণবিধি তৈরি করা হয়েছে ১৯৯৩ সালে। ২০০২ সালে এর কিছু সংস্কারও হয়েছে। এর আগে ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকেই কাউন্সিল অনেক অভিযোগের নিষ্পত্তি করেছে এবং সেগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে কাউন্সিলের সুবিবেচনার ওপর ভিত্তি করে। পরবর্তীতে প্রবর্তিত আচরণবিধির মধ্যে আগে নিষ্পত্তিকৃত সিদ্ধান্তের নীতিসমূহের উল্লেখযোগ্য প্রতিফলন রয়েছে।
বর্তমান বিশ্বে বেশির ভাগ দেশেই সাংবাদিকদের জন্য আচরণবিধি রয়েছে। কিছু কিছু দেশে আইন প্রণয়ন করে এই আচরণবিধি তৈরি করা হয়েছে। কিছু কিছু দেশে এই আচরণবিধি নিয়োগদাতা, গণমাধ্যম সংঘ অথবা সাংবাদিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পেশাদারি সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান নিজেরা তৈরি করে নিয়েছে।
১৯৯৩/২০০২ সালের প্রেস কাউন্সিলের আচরণ বিধিমালায় সবচেয়ে বেশি যে নীতিটির কথা বলা হয়েছে সেটি হচ্ছে- জাতীয় সংহতি, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা এবং বাংলাদেশ সংবিধানের পক্ষে ক্ষতিকর কোনো সংবাদ প্রকাশ না করা। এই নীতিটি অন্য অনেক নীতিতেও প্রতিফলিত হয়েছে।
তত্ত্বগত যেসব নীতির কথা ওই আচরণবিধিতে বিবৃত হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে :
ক) সংবাদের সত্যতা নিরীক্ষণ : যতদূর সম্ভব সংবাদের সত্যতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে হবে। এই উদ্দেশ্যে গুজব অথবা অনিশ্চিত সংবাদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বা অন্যান্য ধরনের অনিয়ম-সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত তথ্য অবশ্যই নিরীক্ষণ করতে হবে।
খ) সংবাদ উৎসের বিশ্বাসযোগ্যতা : একজন সাংবাদিককে অবশ্যই প্রতিবেদন প্রস্তুত করার সময় সংবাদের উৎসের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। ঝুঁকি এড়ানোর জন্য যে সমস্ত সূত্রের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হচ্ছে সেই সমস্ত সূত্রসমূহ সংরক্ষণ করতে হবে।
গ) সংবাদ প্রকাশ না করার বাধ্যবাধকতা : কুরুচিপূর্ণ, অবমাননাকর, বিকৃত ও ভিত্তিহীন সংবাদ ও চিত্র প্রকাশ হতে সংবাদপত্রসমূহকে বিরত থাকতে হবে। ধর্মীয় বা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্রুপাত্মক, অশ্রদ্ধাকর বা বিদ্বেষপূর্ণ সংবাদ প্রকাশ করা যাবে না। জাতীয় ঐক্য সমুন্নত রাখার জন্য সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো থেকে দূরে থাকতে হবে।
ঘ) মতামত প্রকাশ : সংবাদপত্র এবং সাংবাদিক উভয়েরই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে। বিতর্কিত বিষয়সমূহের ওপরও তারা মতামত প্রকাশ করতে পারে। তবে মতামতটি অবশ্যই পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করতে হবে। কোনো বিকৃত বা বিদ্বেষপূর্ণ সংবাদের ওপর মতামত প্রকাশ করা উচিত হবে না।
৪.
উপরের নীতিগুলোর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সব প্রতিফলন একই মাত্রায় সম্ভব নয়। যেমন : ফেসবুকে কেউ একজন কোনো সংবাদ পেলে তা একজন পেশাদার সাংবাদিকের মতো যাচাই করে দেখবে এতটা আমরা আশা করতে পারি না। তবে একজন স্বাভাবিক বিচারবোধসম্পন্ন মানুষ যুক্তিসঙ্গতভাবে যেমন আচরণ পরিহার করবে তা যে কাউকে করতে হবে। কোনো সেতু নির্মাণের মতো বলিদান লাগবে বা চাঁদে কাউকে দেখা গেছে এটা কোনো স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। এ ধরনের সংবাদ পরিবেশন করে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার অধিকার কারও থাকতে পারে না।
তবে উপরের নীতিগুলোর মধ্যে কয়েকটি পরিপূর্ণ মাত্রায় পালনীয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। যেমন : কুরুচিপূর্ণ, অবমাননাকর, অশ্লীল, ভিত্তিহীন সংবাদ ও চিত্র প্রকাশ না করা বা ধর্মীয় বা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্রুপাত্মক, অশ্রদ্ধাকর বা বিদ্বেষপূর্ণ সংবাদ প্রকাশ না করা। বা এ-সংক্রান্ত বেপরোয়া মন্তব্য প্রকাশ না করা।
শেষে যেটা বলতে চাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন আর খুব নতুন কোনো বিষয় নয়। কী প্রকাশ করলে কী প্রতিক্রিয়া হয় তার বহু নজির আমরা এরই মধ্যে দেখেছি। প্রাথমিক অভিজ্ঞতা যা হওয়ার তা ইতিমধ্যে হয়ে যাওয়ার কথা।
আমাদের সবার তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত। প্রকাশ করতে খরচ হয় না, সম্পাদকের নজরদারি নেই, বা বৈষয়িক ঝুঁকি নেই বলে যা ইচ্ছে আমার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারি না। তাতে শুধু নিজের না, মাধ্যম হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অমিত সম্ভাবনাও বিঘ্নিত হয় বা হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
লেখক : আসিফ নজরুল, অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়