৩:৫৯ এএম, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, মঙ্গলবার | | ২১ রজব ১৪৪৬




আবারও ওআর নিজাম রোডে গড়ে উঠেছে দোকান, ভাড়া নিচ্ছে চসিক

১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪ এএম |


ডেস্ক রিপোর্ট : নগরের ওআর নিজাম রোডের প্রবর্তক মোড় থেকে পাঁচলাইশ পর্যন্ত অংশে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে ‘গ্রিড এ ওয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)।  পাঁচ বছর মেয়াদী ওই চুক্তির আওতায় প্রতিষ্ঠানটি মক্কী মসজিদের পাশে নির্মাণ করে দুটি দোকান।  ফলে সেখানে সৌন্দর্যবর্ধনের চেয়েও প্রাধান্য পায় বাণিজ্যিকীকরণ।  এতে অনেকটা নীরব সম্মতি ছিল তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছিরের।  ফলে নগরজুড়ে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা থাকলেও দোকান উচ্ছেদে কোনো উদ্যোগ ছিল না চসিকের।  এরপর ২০২১ সালে মেয়র পরিবর্তন হলে দোকান উচ্ছেদে উদ্যোগ নেয় চসিক।  কিন্তু চুক্তির মেয়াদ তখনো বহাল থাকায় উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি।  সর্বশেষ চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি দোকানগুলো উচ্ছেদ করে চসিক।  কিন্তু বছর না ঘুরতেই একই জায়গায় আবারও বাণিজ্যিকভাবে দোকান নির্মাণ করে ‘গ্রিড এ ওয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং’।  নির্মাণ করা দোকানের মধ্যে আছে ‘ফ্রেশ ফুড এন্ড রেস্টুরেন্ট’ ও ‘শ্রেষ্ঠা মেডিসিন কর্ণার’।  সৌন্দর্যবর্ধনের নামে নতুন করে দোকান নির্মাণ করলেও রহস্যজনক কারণে চুপ করে আছে চসিক।  এমনকি চুক্তির আওতায় ‘গ্রিড এ ওয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং’ থেকে ভাড়াও আদায় করছে চসিক।  চলতি মাসেও বরাদ্দকৃত জায়গার বিপরীতে চসিককে ১৪ হাজার ২৫ টাকা ভাড়া পরিশোধ করে ‘গ্রিড এ ওয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং’।  এমন পরিস্থিতিতে উচ্ছেদ করার পরও ভাড়া নিয়ে চসিক দোকানগুলোর বৈধতা দিচ্ছে কিনা সেই প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ লোকজন।  এ বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা আবারও উচ্ছেদ করব।  পুনরায় যাতে স্থাপনা নির্মাণ করতে না পারে সেজন্য সেখানে সবুজায়ন করা হবে।  এই বিষয়ে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, দোকানগুলো ভেঙে দেয়া হবে।  যারা দোকান নির্মাণ করেছে তাদের জিনিসপত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য কয়েকদিন সময় দেয়া হবে।  যদি না নেয় আমরা ভেঙে দিব।  তিনি বলেন, সেখানে মিনি পার্ক হবে।  সবুজয়ায়ন হবে, বাগান করব।  লোকজন যেন বসতে পারে তার ব্যবস্থা করব।  এদিকে চসিক এবং ‘গ্রিড এ ওয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং’ সূত্রে জানা গেছে, চসিকের উচ্ছেদ ‘আইনবহির্ভূত’ দাবি করে ২২ জানুয়ারি উচ্চ আদালতে রিট করেন ‘গ্রিড এ ওয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং’ এর স্বত্ত্বাধিকারী সুমন বসাক।  আদালত তিন মাসের জন্য উচ্ছেদে স্থগিতাদেশ দেয়।  এরপর ২৮ মে আবারও আবেদন করেন সুমন বসাক।  এবার ৬ মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।  সর্বশেষ গত ২১ অক্টোবর পুনরায় আবেদন করলে আবারও ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেয়া হয়।  মাঝখানে ১১ জুন চসিক আপিল করে।  কিন্তু সেটার শুনানি হয়নি এখনো।  গ্রিড এ ওয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রতিনিধি গাজী মোহাম্মদ আলম বলেন, কর্পোরেশনের সঙ্গে আমাদের পাঁচ বছরের চুক্তি ছিল।  চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর আমরা চুক্তি নবায়নের জন্য কর্পোরেশনে আবেদন করি।  চুক্তির শর্ত ছিল কর্পোরেশন এবং গ্রিড এ ওয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং উভয়ে আলোচনা করে চুক্তি নবায়ন করবে নাকি করবে না তার সিদ্ধান্ত হবে।  কিন্তু কর্পোরেশন আমাদের আবেদনে সাড়া দেয়নি এবং আলোচনা না করেই উচ্ছেদ করে।  এরপর আমরা উচ্চ আদালতে রিট করি।  আমাদের বক্তব্য ছিল উচ্ছেদ আইনানুগ হয়নি।  আদালত উচ্ছেদে তিন মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দেয়।  এরপর মে মাসে ছয় মাস এবং সর্বশেষ গত অক্টোবর মাসে আরো ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেয়।  আমরা কর্পোরেশনকে নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করছি।  চলতি ডিসেম্বর মাসের ভাড়াও জমা দিয়েছি।  আমরা কেবল দোকান নির্মাণ করিনি।  পাঁচলাইশ মোড় থেকে যে ফুটপাত হয়েছে সেটা আমরা করে দিয়েছি।  গ্রিড এ ওয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং–এর প্রতিনিধি উচ্ছেদ অভিযানকে আইনবর্হিভূত দাবি করলেও চসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ১৮ জানুয়ারি গ্রিড এ ওয়ান ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী সুমন বসাককে চিঠি দিয়ে চুক্তি বাতিল করা হয়।  এরপর ২২ জানুয়ারি দোকান উচ্ছেদ করা হয়।  উচ্ছেদ অভিযানের পর চসিকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পাঁচলাইশ মক্কী মসজিদ সংলগ্ন সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত স্থাপনার চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় এবং শর্তানুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা না করার কারণে গ্রিড এ ওয়ান ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাথে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল করা হয়।  ইতোপূর্বে স্থাপনাটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সময় দেয়া হয়।  কিন্তু নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ায় উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে তিনটি দোকান ভেঙ্গে দেয়া হয়। ’ এদিকে গতকাল বিকেলে সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, ওষুধের দোকানটি বন্ধ রয়েছে।  খোলা ছিল রেস্টুরেন্ট।  পাশে একটা সাইন বোর্ড লাগানো রয়েছে।  সেখানে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লেখা আছে– ‘উক্ত প্রকল্প এলাকা অবৈধ উচ্ছেদের বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্টের রিট পিটিশন নং ৭০৪/২০২৪ মূলে স্থগিতাদেশ প্রদান করেছেন।  প্রকল্প এলাকায় প্রবেশাধিকার স্বংরক্ষিত। ’ এসময় মুজিব নামে এক পথচারী বলেন, এখানে সৌন্দর্যবর্ধনের কিছুই দেখছি না।  দোকান করে কেবল ব্যবসা চলছে।  কর্পোরেশনের উচিত ছিল উচ্ছেদের পর উন্মুক্ত হওয়া জায়গাটি ভবিষ্যতে আর বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে না পারে তার ব্যবস্থা নেয়া।  এছাড়া প্রকৃত অর্থে সৌন্দর্যবর্ধন করে জায়গাটিকে নান্দনিক ও দৃষ্টিনন্দন করতে পারত চসিক। 


keya