২:৩৭ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সোমবার |
| ১৮ শা'বান ১৪৪৬
ডেস্ক রিপোর্ট :
ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে ভুয়া তথ্য প্রচারের ২৭১টি প্রমাণ মিলেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইন্টারনেটে এসব ভুল তথ্য ছড়ানো হয়। রোববার তাদের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে ফ্যাক্ট-চেক সংস্থাটি।
রিউমার স্ক্যানার জানায়, গত বছর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যম এবং ভারত থেকে পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্য প্রচারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। গেল জানুয়ারিতে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল। সংস্থাটি জানায়, গত মাসে ভারতীয় গণমাধ্যমে সাতটি ঘটনায় বাংলাদেশকে জড়িয়ে অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। নয়টি ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয় অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে বাংলাদেশকে নিয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
রিউমার স্ক্যানার জানায়, জানুয়ারিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজনৈতিক বিষয়ে সবচেয়ে বেশি ১১৪টি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়। যা মোট ভুল তথ্যের ৪২ শতাংশ। এ ছাড়া জাতীয় বিষয়ে ৬৭টি, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ২৯টি, ধর্মীয় বিষয়ে ১৮টি, বিনোদন ও সাহিত্য বিষয়ে ১৫টি, শিক্ষা বিষয়ে নয়টি, প্রতারণা বিষয়ে ছয়টি, খেলাধুলা বিষয়ে পাঁচটি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়।
সংস্থাটি জানায়, এসব ঘটনায় তথ্যভিত্তিক ভুলই ছিল ১১৫টি। ছবি কেন্দ্রিক ভুল ছিল ৫৪টি এবং ভিডিওকেন্দ্রিক ভুল ছিল ১০২টি। শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যগুলোর মধ্যে মিথ্যা হিসাবে ১৭৫টি, বিভ্রান্তিকর হিসাবে ৬৫টি এবং বিকৃত হিসাবে ৩১টি ঘটনাকে সাব্যস্ত করা হয়েছে। প্লাটফর্ম হিসাবে গত মাসে ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে, যা সংখ্যার হিসাবে ২২৫টি। এ ছাড়া এক্সে ৫৬টি, টিকটকে ৪৪টি, ইউটিউবে ৪২টি, ইন্সটাগ্রামে ১৯টি, থ্রেডসে অন্তত একটি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। জানুয়ারিতে ৩২টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫টিতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয় অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে অপতথ্য প্রচার করা হয়।
রিউমার স্ক্যানার জানায়, ভুল তথ্য প্রচারের তালিকা থেকে বাদ যায়নি দেশের গণমাধ্যমও। ১৬টি ঘটনায় দেশের একাধিক গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখেছে সংস্থাটি।
দেখা গেছে, গেল মাসে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে জড়িয়ে ১৩টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। ৭৭ শতাংশ ক্ষেত্রেই এসব অপতথ্য সরকারের বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ ছিল। জানুয়ারিতে ১২টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে। উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, নাহিদ ইসলাম ও আ ফ ম খালিদ হোসেনকে জড়িয়ে ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে।
গেল মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভুল তথ্যের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়েও ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে। ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নিয়েও।
রক্ষা পায়নি রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোও। গেল মাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে জড়িয়ে দুটিসহ এই বাহিনীকে জড়িয়ে ১২টি ভুল তথ্য প্রচার হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীকে জড়িয়ে একটিসহ পুলিশের বিষয়ে ছড়ানো চারটি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে। এর বাইরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) জড়িয়ে দুটি ভুয়া তথ্যের প্রচার ছিল জানুয়ারিতে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থী ও ঢাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পালটাপালটি ধাওয়া নিয়ে পাঁচটি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার। গত মাসে গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ও ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে ৩৩টি ঘটনায় দেশি ও বিদেশি ২০টি সংবাদমাধ্যমকে জড়িয়ে ৩৯টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
সূত্র : বাসস।