৩:১২ এএম, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, মঙ্গলবার | | ২১ রজব ১৪৪৬




নবীজির উপর দরুদ পাঠ যে কারণে জরুরি

২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৮ পিএম |


এসএনএন২৪ ডেস্ক: দরুদ পাঠ করা মুসলমানদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।  জীবনে অন্তত একবার দরুদ পাঠ করা ফরজ।  কোনো কোনো ফকিহের মতে, এটি ওয়াজিব।  বিশেষ করে কোনো সভা-সমাবেশে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নাম উচ্চারিত হলে বা শোনা গেলে অন্তত একবার দরুদ পড়া ওয়াজিব।  একই সভায় তার নাম বারবার উচ্চারিত হলে প্রতিবার দরুদ পড়া মুস্তাহাব।  যে ব্যক্তি যত বেশি দরুদ পাঠ করবে, তিনি তত বেশি পবিত্র কোরআনের নির্দেশ অনুযায়ী আল্লাহর আনুগত্যকারী বলে গণ্য হবেন।   দরুদ পাঠের রয়েছে অসংখ্য উপকারিতা ও ফজিলত।  নিম্নে দরুদ পাঠের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ও ফজিলত তুলে ধরা হলো: আল্লাহর রহমত লাভ হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,   যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি দশবার রহমত নাজিল করবেন। ’ (মুসলিম, হাদিস: ৩৮৫) ফেরেশতাদের দোয়া লাভ রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মুসলিম ব্যক্তি আমার প্রতি দরুদ পাঠ করে, যতক্ষণ সে দরুদ পাঠরত থাকে, ততক্ষণ ফেরেশতাগণ তার জন্য দোয়া করতে থাকেন। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৯০৭; মুসনাদে আহমাদ, ২/১৮৭)   পাপ মোচন ও মর্যাদা বৃদ্ধি রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, তার জন্য আল্লাহ দশটি রহমত বর্ষণ করেন, তার দশটি পাপ মোচন করেন এবং তার মর্যাদা দশ ধাপ উন্নীত করেন। ’ (মুসনাদে আহমাদ, ৪/২৯; নাসায়ী, হাদিস: ১২৯৭)  নবীজির নৈকট্য লাভ রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পড়বে, কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে। ’ (তিরমিজি, হাদিস: ৪৮৪) তিনি আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি যত বেশি দরুদ পাঠ করবে, জান্নাতে সে তত বেশি আমার নিকটবর্তী হবে। ’ (বাইহাকি, আস-সুনানুল কুবরা, ৩/২৪৯)  কিয়ামতের দিনে শাফাআত লাভ রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি দরুদ পাঠ করল অথবা আমার জন্য ‘ওসিলা’র দোয়া করল, কিয়ামতের দিন তার ব্যাপারে শাফাআত করা আমার জন্য কর্তব্য। ’ (মুসলিম, হাদিস: ৩৮৫; আবু দাউদ, হাদিস: ৫২৭)  রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে দরুদ পৌঁছায় রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আমার প্রতি দরুদ পেশ করো।  কারণ তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, তোমাদের পেশকৃত দরুদ আমার কাছে পৌঁছায়। ’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১০৪৭, ২০৫২; নাসায়ী, হাদিস: ১৬৭৮)  চিন্তা দূর হয় ও উদ্দেশ্য পূরণ হয় হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে বললেন,    আমি আপনার ওপর অনেক বেশি দরুদ পাঠ করি।  আপনার জন্য কতটুকু সময় নির্ধারণ করব?’ রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তোমার যা মন চায়।  যদি আরও বেশি করো, তা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। ’ সাহাবি বললেন, ‘আমি আমার সবটুকু সময় আপনার ওপর দরুদ পাঠের জন্য নির্ধারণ করব। ’ রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তবে তোমার চিন্তা ও ক্লেশ দূর হবে এবং গুনাহ মাফ হবে। ’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৪৫৭) অন্তর পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন হয় রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আমার প্রতি দরুদ পাঠ করো।  নিশ্চয়ই আমার ওপর দরুদ পাঠ করা তোমাদের অন্তরের পবিত্রতা। ’ (সিলসিলাতুস সহিহাহ, হাদিস: ৩২৬৮)  দোয়া কবুল হয় রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক দোয়া দরুদ পাঠ না করা পর্যন্ত আড়াল করে রাখা হয়। ’ (সহিহুল জামে, হাদিস: ৪৫২৩) হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেছেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি রসুল (সা.)-এর ওপর দরুদ না পড়বে, তোমার দোয়া আসমানে যাবে না। ’ (তিরমিজি, ১/১১০)  গরিবের দরুদ পাঠ সাদাকাস্বরূপ আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে মুসলমান দান করার সামর্থ্য রাখে না, সে যেন দরুদসহ দোয়া পাঠ করে।  এটি তার জন্য সাদাকা হিসেবে গণ্য হবে। ’ (ইবনে হিব্বান, ৩/১৮৫) দরুদ পাঠ শুধু একটি ইবাদত নয়; এটি আল্লাহর রহমত, পাপমোচন, মর্যাদা বৃদ্ধি এবং রসুলুল্লাহ (সা.)-এর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম।  মুসলিম জীবনে এর গুরুত্ব অপরিসীম।  আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে দরুদ পাঠের তাওফিক দান করুন। 


keya