১১ জানুয়ারী ২০২৪, ১০:১৭ এএম |
ডেস্ক রিপোর্ট :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থ মেয়াদে যে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে, সেই মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার জন্য ডাক পেয়েছেন চট্টগ্রাম থেকে ড. হাছান মাহমুদ ও ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবারও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হচ্ছেন। তবে এবার চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় চমক হচ্ছেন সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ সন্তান শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নওফেল উপমন্ত্রী থেকে এবার প্রমোশন পেয়ে নতুন মন্ত্রিসভায় পূর্ণমন্ত্রী হচ্ছেন।
এবার বাদ পড়েছেন গতবারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী আনোয়ারা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। অপরদিকে তিন পার্বত্য জেলা থেকে এবার প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন খাগড়াছড়ি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
খাগড়াছড়ি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা গতকাল বুধবার বলেন, আমাকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ফোন করা হয়েছে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথের জন্য। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ, নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান দেয়ার জন্য।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠিত হবে। নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীকে শপথ পড়াবেন। এরপর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি। শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দফতর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে তারাই হবে দেশের নতুন সরকার। শপথ নেওয়া পর্যন্ত আগের মন্ত্রিসভা বহাল থাকবে। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে আগের মন্ত্রিসভা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
সূত্রমতে, মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে ৩৬ জনের নাম মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে দেওয়া হয়েছে। এ মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী থাকছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে যারা মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন তাদের সবাইকে আজ বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহণের জন্য গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ফোন দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার রাত পৌনে ৯টায় সচিবালের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এবং টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের নাম ঘোষণা করেন। শপথ নেওয়ার পরপরই তাদের দপ্তর বণ্টনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলেও তিনি জানান।
এর আগে সকাল ১০টায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য হিসাবে শপথ নেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ নবনির্বাচিত ২৯৮ জন সংসদ সদস্য। তার আগে সংসদ সদস্য হিসাবে প্রথমে শপথ গ্রহণ করেন বর্তমান স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরী। এরপর স্পিকার হিসেবে তিনি শেখ হাসিনাসহ অন্য সংসদ সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান। জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র হিসেবে বিজয়ীরাও এদিন শপথ নেন।
সংসদ নেতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো সংসদ নেতা হলেন তিনি। একাদশ সংসদে মতিয়া চৌধুরী ছিলেন সংসদ উপনেতা। এবারও এ পদে তাকে নির্বাচিত করেছে আওয়ামী লীগ। চিফ হুইপ হয়েছেন নূর–ই–আলম চৌধুরী।
শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দ্বাদশ সংসদ গঠিত হয়। বাকি ছিল প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের বিষয়টি। রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেওয়ার পর সে কর্মকাণ্ডও সম্পন্ন হয়েছে।
উল্লেখ্য, একাদশ সংসদের মন্ত্রিসভায় চট্টগ্রাম থেকে দুইজন মন্ত্রী, একজন উপমন্ত্রী এবং একজন প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় হুইপ পেয়েছিলেন। দ্বাদশ সংসদের নতুন মন্ত্রিসভায়ও দুইজন মন্ত্রী পেলেন চট্টগ্রামবাসী। কিন্তু চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশা ছিল নতুন মন্ত্রিসভায় এবার চট্টগ্রাম থেকে একাধিক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী স্থান পাবেন।
কিন্তু গতকাল রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এবং টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের নাম ঘোষণার তালিকা থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে মন্ত্রী হিসেবে শুধুমাত্র ড. হাছান মাহমুদ ও ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল স্থান পেয়েছেন। একজন উত্তর চট্টগ্রামের, অপরজন নগরীর। বঞ্চিত হয়েছেন দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসী। গত একাদশ সংসদের মন্ত্রিসভায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে নির্বাচিত সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ভূমি মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। এবার তিনি বাদ পড়েছেন। দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে কেউ স্থান পাননি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় অর্জন করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল বুধবার সকালে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত ২২২ জন নতুন সংসদ সদস্য শপথ গ্রহণ করেছেন।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয় পেয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে ২২২টি আসনে বিজয়ী হয়েছে নৌকার। জোট শরিকরাও নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে দুটি আসন পেয়েছে। জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১, কল্যাণ পার্টি পেয়েছে একটি আসন। প্রথমবারের মতো স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২ আসনে বিজয়ী হয়েছেন। যদিও তাদের মধ্যে বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের নেতা।