১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২২ এএম |
ডেস্ক রিপোর্ট :
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বিদেশে পাচার হওয়া প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার সন্ধানে তদন্তে যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে অন্তর্র্বর্তী সরকার। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন ১৫ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তি কিনতে যে অর্থ ব্যবহার করা হয়েছে তার উৎস চিহ্নিত করার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। গতকাল বুধবার ব্রিটিশ সংবাদপত্র ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ১৭০০ কোটি ডলার বা কমপক্ষে ২ লাখ কোটি টাকা বিদেশে সরানো হয়েছে। সেই অর্থের খোঁজে তদন্ত করছে নতুন সরকার ও প্রশাসন।
আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, তিনি এ বিষয়ে যেসব দেশের সাহায্য চেয়েছেন, যুক্তরাজ্য তার একটি। তিনি জানান, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে, সম্পদ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও এ ধরনের সম্পদ পাচার হয়ে থাকতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার খুবই সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব দেখিয়েছে। দেশটির হাইকমিশনার তার অফিসে এসেছিলেন এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনার সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রীর মালিকানাধীন ১৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পত্তির অর্থের তহবিলের উৎস শনাক্ত করতে চায়। এই সম্পদ যেন পুনরুদ্ধার করা যায়, সেই লক্ষ্যে ব্রিটিশ সরকারের কাছে সাহায্য চেয়েছে বাংলাদেশ, বলেন তিনি। গভর্নর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অজান্তে এত ব্যাপক আকারের চুরি সংঘটিত হতে পারে না। তবে এ বিষয়ে হওয়া সব তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলেছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আসা এসব অভিযোগ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের নতুন লেবার সরকারের জন্য জটিল সমস্যা তৈরি করতে পারে। কারণ ব্রিটেনের নতুন এই লেবার সরকারের সিটি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক শেখ হাসিনার ভাগনি। এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের অনুরোধের জবাব দেননি টিউলিপ। অন্তর্র্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পরপরই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ ব্যাপারে ব্রিটেনের সাহায্যের জন্য ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে চুরি করে বিদেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধার করতে যাচ্ছে। এটি এ সরকারের অগ্রাধিকারগুলোর একটি।
শেখ হাসিনার দেড় দশকের শাসনকালে ভোটে কারচুপি, অধিকার লঙ্ঘন এবং ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। হাসিনার দল আওয়ামী লীগের মিত্রদের বৈদেশিক সম্পদের বিষয়টি বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপকভাবে চর্চিত।
চলতি বছরের শুরুর দিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল–ইউকে বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানির মালিকানাধীন ব্রিটিশ রিয়েল এস্টেট পোর্টফোলিওকে অঘোষিত সম্পদ এর উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছিল, কর্তৃপক্ষের বিষয়টি তদন্ত করা উচিত।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এই রাজনীতিবিদের অবৈধ সম্পদের বিশাল সাম্রাজ্যের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে প্রায় ২০ কোটি পাউন্ড মূল্যের ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তি নিয়ে গড়ে তুলেছেন রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য। যুক্তরাজ্যে কোম্পানি হাউসের করপোরেট অ্যাকাউন্ট, বন্ধকি চার্জ এবং এইচএম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে ব্লুমবার্গ সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পদের এ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছিল।
গত জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচ বছর ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। সবশেষ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে পুনর্র্নিবাচিত হলেও মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি। তবে ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদে ছিলেন তিনি।