২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৮ এএম |
নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৮৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন কফিল উদ্দিন নামে এক যুবলীগ কর্মী। তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক উপ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
হেলাল আকবর বাবরের সঙ্গে তার ছবিও রয়েছে। যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডেও সক্রিয় ছিলেন কফিল। নিজে গত ৪ আগস্ট নগরীর নিউমার্কেট চত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে আন্দোলনে অংশ নিয়ে আহত হয়েছেন দাবি করে এ মামলা করেন।
পুলিশ বলছেন, কফিল উদ্দিন একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। তার বিরুদ্ধে থানায় তিনটি মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগেও একটি মামলা রয়েছে।
সোমবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে কফিল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তিনি নগরের কোতোয়ালি থানার নন্দনকানন এলাকার বাসিন্দা। আদালত বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেন, তিনি গত ৪ আগস্ট নগরের নিউমার্কেট গোলচত্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেন। ওই দিন আসামিদের কয়েকজনের নির্দেশে ও পরিকল্পনায় বাকি আসামিরা গুলি করেন। ককটেল বিস্ফোরণও ঘটান। এতে বাদী হাতে আঘাত পান। ঘটনার পর হাসপাতালে ভর্তি হন।
এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন, পিবিআই সাবেক প্রধান বনজ কুমার মজুমদার, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক এমপি মজিবুর রহমান, জাতীয় পার্টির চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠ, সাবেক ঢাকা মহানগর ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ, পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার, সাবেক পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি ওবায়দুল হক, নেজাম উদ্দিন, মোহাম্মদ মহসীন, জাহিদুল কবিরসহ ২৬ পুলিশ কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, সাবেক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ, ওয়াসিম উদ্দিন ও মোবারক আলীসহ ১৮৭ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কফিল উদ্দিন নগরের নন্দনকানন এলাকায় একটি থাই অ্যালুমিনিয়ামের দোকানে চাকরি করেন। নগরের কোতোয়ালি থানায় অস্ত্র, মাদকসহ তিনটি মামলা ও আনোয়ারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হয়ে কারাভোগও করেছেন। এ ছাড়া ২০২১ সালের ৮ মে রাতে নগরের পুরাতন রেলওয়ে স্টেশনের সামনে থেকে চারটি ছোরাসহ কফিল উদ্দিনসহ আরও তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তখন কোতোয়ালি থানার ওসি ছিলেন নেজাম উদ্দিন।
ওই ঘটনায় কফিল উদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে পুলিশ। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন তৎকালীন কোতোয়ালি থানার এসআই বোরহান উদ্দিন। কফিল উদ্দিনের করা মামলায় ওসি নেজাম উদ্দিন এবং এসআই বোরহান উদ্দিনকেও আসামি করা হয়।
এদিকে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হামলায় আহত হওয়ার অভিযোগ এনে গত ১০ নভেম্বর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন রায়হান নামে এক শিক্ষার্থী। তিনি ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি চট্টগ্রামের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্র। মামলায় তিনি ২৭৮ জনকে আসামি করেন। ওই মামলায় ২৩ নম্বর আসামি করা হয় কফিল উদ্দিনকে। অপরদিকে গত ১৮ নভেম্বর আদালতে করা কফিল উদ্দিনের মামলায় রায়হানকে ৯২ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
কফিল উদ্দিন দায়ের করা মামলা সম্পর্কে বলেন, ‘আমি নিজেই ছাত্রদের পক্ষে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতনে আমিও আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম। আহত হয়েছি। এ কারণে মামলাটি করেছি। এখানে অন্যকোনও বিষয় নেই। ’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ‘কফিল উদ্দিন নামে যে ব্যক্তি আদালতে মামলার বাদী তার বিরুদ্ধে যদি অন্যকোনও অপরাধে মামলা থেকে থাকে অবশ্যই সেগুলো আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়াও এ মামলা যদি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক বলে প্রমাণ পাওয়া যায়- তাহলে বাদীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধি ২৫০ ও দণ্ডবিধি ২১১ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। এ ছাড়াও মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও এই বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনিও মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। ’