৬:৪৬ এএম, ১২ অক্টোবর ২০২৪, শনিবার | | ৮ রবিউস সানি ১৪৪৬




মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা :চট্টগ্রামে ‘পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’

২৪ মার্চ ২০২২, ০৩:৫১ পিএম |


এসএনএন২৪.কম : মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতে গড়ে তোলা হয়েছে ‘পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর-চট্টগ্রাম’।  স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রথম আক্রমণের শিকার হয়েছিল পুলিশ। 

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনেই প্রথম পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মর্টার, কামান, ট্যাঙ্ক আর ভারী অস্ত্রের বিরুদ্ধে কেবলমাত্র থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল।  সেদিন জীবন বাজী রেখে লড়াই করেছিলেন পুলিশ সদস্যরা।  শহীদ হয়েছিলেন দেশের জন্য।   

সেই পুলিশ সদস্যদের স্মরণে নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইনে প্রায় ছয় হাজার বর্গফুট আয়তনের ওপর ‘পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’ তৈরি করা হয়েছে।  নান্দনিক শিল্পশৈলিতে নির্মিত এ জাদুঘরে ঢুকলে প্রথমেই চোখে পড়বে বঙ্গবন্ধু গ্যালারি।  গ্যালারির দু’পাশের দেয়ালে আছে বঙ্গবন্ধুর নানান সময়ের দুর্লভ সব আলোকচিত্র।   

পাশেই মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা প্রায় দুই-তিনশ বইয়ের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এক মনোরম লাইব্রেরি।  চাইলে লাইব্রেরিতে বসে বই পড়তে পারবেন।  জাদুঘরে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাসের বিশাল সংগ্রহশালা।  যত্নের সঙ্গে সংরক্ষিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন পুলিশ বাহিনীর নানান স্মৃতিচিহ্ন, অস্ত্র, পোশাক, দলিল-দস্তাবেজ। 

জাদুঘরের মূল কক্ষে প্রবেশ করলেই শোনা যায় মুক্তিযুদ্ধকালীন দেশাত্মবোধক বিভিন্ন গান।  একদিকে আছে অডিও ভিজুয়্যাল গ্যালারি।  সেখানে দর্শনার্থীদের জন্য ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধের ওপর নির্মিত ডকুমেন্টারি ও বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দেখার ব্যবস্থা আছে। 

যুদ্ধের সময় উদ্ধারকৃত গুলি ও মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত হ্যান্ডমাইক, যুদ্ধের সময় দূর থেকে শত্রুর অবস্থান দেখার জন্য পুলিশ বাহিনীর সার্চলাইট, রাজারবাগ পুলিশ লাইনের টেলিকম ভবনের দেয়াল ঘড়ি, যুদ্ধকালীন পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন চিঠিপত্র, পোশাক সংরক্ষণ করা হয়েছে সেখানে।   

এছাড়াও আছে শহীদ পুলিশ সুপার এম শামসুল হক এর স্মারক হিসেবে ব্যবহৃত র‌্যাংক ব্যাজসহ টিউনিক সেট, স্টিক, ক্যামেরা, কলম, বেল্ট, পোশাক, ক্যাপ এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আর আই আকরাম হোসেনের স্মারক হিসেবে তাঁর ব্যবহৃত রেডিও। 

একাদশ শতাব্দীতে ‘দিগ্বিজয়ী’ প্রথম উইলিয়ামের নেতৃত্বে সহস্রাধিক নর্ম্যান, ব্রেটন, ফ্লেমিশ এবং অন্যান্য ফরাসি প্রদেশের অধিবাসীদের যৌথ বাহিনীর ইংল্যান্ড আক্রমণ, বিজয় ও অধিকারের ফলশ্রুতিতে অ্যাংলো-স্যাক্সন জনগোষ্ঠীর ইকোলজিতে যে পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল তার কিয়দংশের সুরাহা করার জন্য ১২৩৩ ও ১২৫২ সালে জারিকৃত অধ্যাদেশে ওয়াচ অ্যান্ড ওয়ার্ড বা কনস্টেবুলারী নিয়োগের আবশ্যকতা লিপিবদ্ধ ছিল।   

শান্তি স্থাপন ও রক্ষা এবং আইন প্রয়োগকে কাঠামো প্রদান করা হয়ছিল ১২৮৫ সালের ওয়েস্টমিনিস্টার স্ট্যাটুটের মাধ্যমে।  অভিন্ন কায়দায় গোপনীয়তার সংস্কৃতি চর্চার ফলে পরবর্তী ৫০০ বছর পুলিশের ইতিহাসের অরৈখিকতা নিয়ে কোনও স্মারক সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়নি বিধায় ১৮২৯ সালে রবার্ট পিল কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিক মেট্রোপলিটন পুলিশকে তদানীন্তন নগর ও নাগরিকের আস্থা অর্জনে বহুমুখী নতুনত্ব আনয়ন করতে হয়েছিল। 

বিজ্ঞানসম্মত, প্রাতিষ্ঠানিক ও পেশাজীবী ইতিহাসচর্চা ও গবেষণায় জানা যায়, রবার্ট পিলের নগর পুলিশ ও নাগরিকের মধ্যকার পারস্পরিক দূরত্ব ও পলায়নপরতা মূলত পুলিশের দেশ ও সমাজ সম্পৃক্ততার ইতিহাস স্মারক ও প্রমাণকের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে না পারার কারণেই।  বর্তমান প্রজন্ম পরবর্তী প্রজন্মকে স্বাধীনতা, সমাজ, পুলিশ সম্পর্কে যে প্রাসঙ্গিক কাঠামো প্রদান করবে, তার আলোকেই ভবিষ্যতের নাগরিকরা পুলিশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন।   

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ আধুনিক শিল্প ও স্থাপত্যের মিশেলে নির্মিত জাদুঘরে বিপ্লব ও দেশপ্রেমের স্মারক থরে থরে সাজিয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছে। 

১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টার দা সূর্য সেন এর নেতৃত্বে স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীদের দ্বারা ব্রিটিশ পুলিশের চট্টগ্রামে অবস্থিত অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ অফিসের ধ্বংস সাধন ও ইউরোপিয়ান ক্লাবে হামলা চালানোর মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের প্রয়াস এবং ১৯৭১ সালের মার্চে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে চট্টগ্রামের এসপি এম শামসুল হক, কোতোয়ালী থানার ওসি আব্দুল খালেক, দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের আরআই আকরাম হোসেন সহ ৮১ জন পুলিশ সদস্যের শাহাদাৎবরণ ও অন্যান্য ঐতিহাসিকভাবে  তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাবলীকে দৃষ্টিলব্ধ অবয়ব প্রদানের লক্ষে মৌলিক ব্রিটিশ স্থাপত্য শৈলিতে প্রতিষ্ঠিত লাল ভবনদ্বয়ের অখণ্ডতা বজায় রেখে আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, শিল্প ও স্থাপত্যের ক্রিয়ামূলকতা ও মিনিমালিজম আরোপণের মাধ্যমে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে ‘পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, চট্টগ্রাম’ নির্মাণ করে।   

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর জানান, ‘পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর-চট্টগ্রাম’ এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইতিহাসের স্মারক সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে যথাযথভাবে উপস্থাপন।  মাস্টারদা সূর্য সেনের ব্রিটিশবিরোধী বিদ্রোহ ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে চট্টগ্রাম পুলিশের আত্মত্যাগ মূলত চট্টগ্রামের ইতিহাস।  বিশেষ করে এই অঞ্চলে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার ইতিহাস বিষয়ে সচেতন করে তোলা, যার ফলে তারা মাতৃভূমির জন্য গর্ব ও দেশাত্মবোধে উদ্দীপ্ত হবে এবং উদার অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী হবে।   


keya