ডেস্ক রিপোর্ট :
চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অগ্রগতিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা’। এ কারণে নগরের গুরুত্বপূর্ণ চারটি খালের কাজে অগ্রগতি করতে পারেনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। ফলে হিজড়া, মির্জা, চশমা এবং জামালখান খাল সংশ্লিষ্ট এলাকায় চলতি বছরের বর্ষায় জলাবদ্ধতার শঙ্কা করছে খোদ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা। ভূমি অধিগ্রহণ এবং উচ্ছেদ পরিচালনা করা ছাড়া এই চারটি খালের কাজ করা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, নগরীর ৫৭টির মধ্যে ৩৬টি খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ৩৬টি খালের মধ্যে ১৬টি খালের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। এছাড়াও আরও ১০টি খালের কাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে। এর বাইরে হিজড়া, মির্জা, চশমা এবং জামাল খানসহ আরও ১০টি খালের সংস্কার ও সম্প্রসারণ এখনও বাকি রয়েছে।
যার কারণে কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, প্রবর্তক, দামপাড়া, মেহেদীবাগ, সিডিএ এভিনিউসহ আরও কিছু পয়েন্টে জলাবদ্ধতার শঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, নগরের অভ্যন্তরে হিজড়া, মির্জা, চশমা এবং জামাল খান খালের কাজ আমরা তেমন একটা করতে পারিনি। এই খালগুলোর চারপাশ দখল করে এত বেশি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। মূল খালের তিন ভাগের এক ভাগ দখল করে ফেলেছে আশপাশের লোকজন। তাই এই চারটি খালের স্থাপনা ভেঙে খালের পাশে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করতে আমাদের আরও কিছুদিন সময় লাগবে। মূলত ভূমি অধিগ্রহণ করতে না পারার কারণে আমরা সেখানে কাজ করতে পারছি না। তাই ভূমি অধিগ্রহণ শেষ করতে না পারলে নগরের অভ্যন্তরের জলাবদ্ধতা শেষ হবে না।
ভূমি অধিগ্রহণ করতে না পারার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি সিডিএ দেখছে। আমাদের ভূমি অধিগ্রহণ করে দিলে আমরা কাজ শুরু করতে পারবো। এখনও পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণের অর্থ ছাড় না হওয়ায় ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে আমরা সিডিএকে বারবার তাগিদ দিচ্ছি। ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হলে আমাদের কাজ করতে বেশিদিন সময় লাগবে না।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক আহমদ মাঈনুদ্দিন বলেন, জলাবদ্ধতা প্রকল্পে আমাদের ২১ খালে ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বিভিন্ন ধাপে আমরা জেলা প্রশাসনের কাছে ৭টি প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তবে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য এখনও পর্যন্ত কোন অর্থ বরাদ্দ দেয়নি সরকার। অধিগ্রহণের বরাদ্দ পেলেই আমরা কাজ শুরু করতে পারবো।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ’র ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় শেষ হয় ২০২০ সালের জুন মাসে। সর্বশেষ অনুমোদন পাওয়া নতুন আরডিপিপি অনুযায়ী জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের ব্যয় ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা এবং সময় ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ বছরের ৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করে সিডিএ। এরপর ২৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। বর্তমানে প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৭০ শতাংশের বেশি এবং ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ২২০ কোটি টাকার মত।