৪:২২ পিএম, ৪ অক্টোবর ২০২৩, বুধবার |
| ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫
এন এ খোকন : ভ্রমণ করে না অথবা করতে চায় না এমন মানুষ পাওয়া বড় মুশকিল। একঘেঁয়েমী জীবন যাত্রায় মানুষ যখন হাঁপিয়ে ওঠেন, তখন তার অন্তত কিছু সময়ের জন্য একটু আরাম, একটু শান্তির খোঁজে বেরিয়ে পরেন সৃষ্টিকর্তার অপারময় সৃষ্টির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখার জন্য কাছে বা দূরে কোথাও। পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন দেশের দর্শনীয় স্থান। আমাদের সুজলা-সুফলা নদীমার্তৃক এই দেশের মধ্যেই রয়েছে পাহাড়, পর্বত, সমুদ্র, জঙ্গল, স্থাপত্য, পুরাকীর্তি ইত্যাদি। পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য রয়েছে বিনোদনের নানান ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক সম্পদের অফুরন্ত সম্ভার। আর আপনি যদি একজন পর্যটক হিসেবে ভ্রমণ করতে চান, তবে তার আদি গোড়াপত্তন ও ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা দরকার।
চট্টগ্রাম শহরে এসেছেন অথচ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত দেখলেন না তা কি হয়? তাই চলুন শহরে একদম লাগানো এই সৈকতে একবার ঢু মেরে আসি।
নগরীর কোলাহল পেরিয়ে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দুরে চোখে পড়বে উত্তাল বিশাল জলরাশির বঙ্গোপসাগর। কোনো উৎসব, পার্বণ কিংবা ছুটির দিনগুলোতে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার আগ্রহ দেখান না এমন মানুষ খুজে পাওয়া ভার। সৈকতে যাওয়ার পথে চোখে পড়বে পাহাড়, উঁচু উঁচু শিল্প কারখানা, পুরো পথের একপাশে বয়ে চলা নদী-সাগর।
সৈকতের চারপাশে প্রকৃতির নৈসর্গিক মনলোভা দৃশ্যের হাতছানি সঙ্গে সমুদ্রবন্দরের কর্মব্যস্ততা ও বিশাল সমুদ্রের সঙ্গে কর্ণফুলী নদীর মিলনমেলা। সাগর পাড়ের বালুকা রাশি, বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ মন ভরিয়ে দিবে আপনার । লক্ষ করুন নানান বয়সী মানুষ কত না আনন্দ করছে সেখানে। সৈকতজুড়ে চার কোণ বিশিষ্ট কংক্রিটের ব্লকগুলো দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। এতে সৈকতের সৌন্দর্য অনেকটা বেড়েছে। জোয়ারের সময় সিসি ব্লকের ওপর আছড়ে পড়া সমুদ্রের ঢেউ এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা করে। এতসব মনোমুগ্ধকর পরিবেশের কারণে চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গা সৈকতটি অন্যান্য সৈকত থেকে খানিকটা আলাদা। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার যারা দেখনি কিংবা সময়ের অভাবে দেখার সুযোগ পান নি, তাদের এই পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত হতে পারে সবচেয়ে ভালো বিকল্প ।
ইতোমধ্যে এই সৈকত বিশ্ব পরিচিতি পেয়েছে। বিকেল হতে না হতেই হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমায় এই সমুদ্র সৈকতে। পরিবেশটা এতটাই মনোমুগ্ধকর এখানে না এলে বুঝা যাবে না ।
তীরে দাঁড়ালেই কানে বাজে সাগরের কল্লোল, পায়ে এসে লুটিয়ে পড়বে নীল জলরাশির অপার ঢেউ, দেখা মিলবে বিশ্বের নানা দেশের নানা পতাকাবাহী নোঙর করা সারি সারি জাহাজ। ঘোড়ায় চড়ে সৈকতে ভ্রমণ ,স্পীড-বোটে উত্তাল জলরাশির সাথে মিতালি, সমুদ্র তীরেই ঘুড়ে বেরানোর জন্য সী-বাইক করার সুযোগ আছে এখানে।
নয়নাভিরাম এসব দৃশ্যের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন সূর্যটা সমুদ্রে ডুবে যাবে টের পাওয়া মুশকিল। পৃথিবীর কোথাও এমন সৌন্দর্যে ভরপুর দ্বিতীয় কোনো নদীর মোহনা সত্যিই বিরল। দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্রের সফেদ জলরাশি আর সাগরপাড়ে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের মাতম আনমনা করে তোলে দর্শনার্থীদের।
তাছাড়া পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত হতে সূর্যাস্ত দেখার অপূর্ব সুযোগ তো আছেই। সমুদ্রে ডুবে যাওয়া সূর্যটা দেখে নিতে ভুলবেন না যেন। সূর্যাস্তের এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আপনার মনকে অন্যরকম ভালো লাগায় ভরিয়ে দিবে । মনকে আরও বেশি পুলকিত করবে। সবচেয়ে ভালো লাগবে সন্ধ্যার পরিবেশ। তাই তো পরিবার পরিজনের সাথে সময় টা ফ্রেমে বন্দি করে রাখেন অনেকেই ।
কর্ণফুলী নদীর পূর্ব পাড়ে কাফকো ও ইউরিয়া সার কারখানার লাল-নীল বাতির আলোকছড়া সমুদ্রের জলতরঙ্গে মিশে সৃষ্টি হয় এক চোখ জুড়ানো দৃশ্য। সূর্যস্নান দেখে এবার নিজের কিংবা স্বজনদের জন্য কেনাকাটা করে নিতে পারেন পাশের ঝিনুক মার্কেট থেকে । এতে শামুক-ঝিনুক ও বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছে প্রায় ৪৩৬ টি দোকান। পুতিমালা শামুক ঝিনুকের বাহারি সামগ্রী কিংবা পাশের দেশ মায়েনমার থেকে আসা নানা টুকিটাকি জিনিস সবই নজর কাটবে আপনার । বাঁধ পেরিয়ে সমুদ্রের বালুকা বেলায় পর্যটকদের রসনা বিলাসের জন্য প্রস্তুত অসংখ্য খাবার হোটেল।
এই বার পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে একটু বেরিয়ে ঢু মেরে আসতে পারেন পাশের নেভাল এভিনিউতে। কর্ণফুলী নদীর সাগরের সাথে যেখানে টায় মিশেছে সেখানে রাস্তার পাশে শত শত মানুষ ভিড় করে।
অন্যরকম এক আনন্দ উপভোগ করতে সাগরের মৃদু বাতাসের সাথে আপনার নাকে আসবে কাঁকড়া পেঁয়াজুর সুঘ্রাণ । এখানে এসে কাঁকড়া খাওয়ার লোভটা সামলাতে পারেন না অনেকেই । নেভাল সড়কে দলবেঁধে আসেন অনেকেই। পরিবার পরিজন কিংবা বুন্ধ-বান্ধব নিয়ে আড্ডা গানে মেতে উঠেন নদী ও সাগরের মোহনায়।
কীভাবে যাবেন
চট্টগ্রাম শহরের এ কে খান কিংবা জিইসি থেকে খুব সহজে যেতে পারেন সৈকতে! চট্টগ্রামে বসবাসকারীদের নতুন করে যাবার উপায় বলার দরকার নেই। সড়ক পথে যেতে চাইলে-অলংকার মোড়- এ কে খান হয়ে সরাসরি চলে যেতে পারবেন সৈকতে।
সি-বিচ লেখা বাসগুলোতে চেপে বসলেই হবে শুধু। আর যদি নগরীর জিইসি মোড় থেকে যেতে চান তবে ১৮০-২০০ টাকায় সিএনজি অটোরিকশা নিয়েও যেতে পারবেন।
সতর্কতা
সৈকতে ঘুরতে গিয়ে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি এড়াতে দল বেধে যাওয়াই ভালো। কোনো বিপদ কিংবা অভিযোগ থাকলে সৈকতের ভ্রাম্যমাণ পুলিশ ফাঁড়িতে জানাতে পারেন। তবে অধিক লোকের সমাগম আছে ওই দিকটায় থাকাই শ্রেয়। সৈকতে বেড়াতে গেলে নিজস্ব ক্যামেরা নিয়ে যেতে পারেন। কেননা একাকী ভ্রমণে গেলে সৈকতে থাকা ভ্রাম্যমাণ ফটোওয়ালাদের কাছে ছবি তুলতে না যাওয়াই ভালো। স্পিডবোড, নৌকা, ঘোড়া যেখানেই চড়ুন! আগে দেখে শুনে ভাড়া শুনে নিলে ভালো হয়।
ভ্রমণ নিয়ে আপনার যেকোনো অভিজ্ঞতা, টিপস কিংবা লেখা পোস্ট করুন আমাদের সাইটে । আপনাদের মতামত জানাতে ই-মেইল করতে পারেন nakhokan12@gmail.com এই ঠিকানায়।