একাত্তরের শেষ লগ্ন, বাংলা নামের দেশের
মানুষের জীবন দুলছে একটি কৃষ্ণদানবের হাতে
আর বাতাসে কেবল ঝুলে আছে এক নিঃসীম নৈঃশব্দ।
আমরা তখন কথা বলার অধিকার হারিয়েছি,
আমাদের জিভ তখন অসাড় করে দিয়েছে তারা।
তাদের পাপবিদ্ধ হুকুম তামিল করতে আমরা
আটকে গেছি জীবন্মৃত্যুর ভেতরে।
তারা আমাদের নিয়ে যেতে চায় এক গহিন আঁধারের
বিজনদেশে। কোনো নিজস্ব ভাবনার জায়গা নেই সেখানে
কোনো নির্দেশকে পরাভূত করার উপায় নেই সেখানে।
এর ব্যত্যয়ে বুলেট ঝাঁজরা করবে বুক, কিংবা
শাণিত মৃত্যুখড়্গ এসে আছড়ে পড়বে স্কন্ধদেশে। অথবা
জীবন্তভাবেই শায়িত করা হবে কবরের অন্ধকারে।
এই তো ছিল সেসময়ের নিরন্তর নিয়তি।
মসীকৃষ্ণ অমারজনী পার হয়ে নতুন দিনের ঊষার আলোয়
উদ্ভাসিত হতে পারে কোনো সকাল—এ তো ছিল অভাবিত!
তারপরও অলৌকিক ঘটনা ঘটে।
তারপরও গভীর নৈঃশব্দের ভেতরে কথা থেকে যায়।
দিনটি ছিল এগারোই ডিসেম্বর!
পুব আকাশ লোহিত রঙে রঞ্জিত হয়ে উঠছিল ক্রমশ
আমি শুনলাম সেই অমৃত স্লোগান—‘জয় বাংলা’!
দূর থেকে তা ভেসে আসছিল, আর ধ্বনিত হয়ে উঠছিল
আকাশে বাতাসে। অকস্মাত্ আমি কেঁপে উঠলাম,
শীতল স্রোত বয়ে গেল শরীরজুড়ে।
তারপর এল সেই সহস্রবছরের কাঙ্ক্ষিত বিজয়।
আজ সেই সূর্যই প্রবল প্রতাপে আকাশে আলো ছড়ায়
আমি শিহরত বোধ করি, বেঁচে আছি এখনো।
এখনো আমি বাতাসে শ্বাস দিই। কেবল বেঁচে আছি
এই কারণে, তাদের পাপাচারের সাক্ষী যে আমি।
সম্পাদনায় : রফিকুল ইসলাম-০৭, এসএনএন২৪.কম