৮:২৪ পিএম, ৪ অক্টোবর ২০২৩, বুধবার |
| ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫
শেখ খালেদ হোসেন :
হে রাসুল (দ), আপনি বলে দিন তারা যেন আল্লাহর রহমত ও দয়া পেয়ে খুশি উদযাপন করে। এটা তাদের জন্য তাদের সঞ্চিত যাবতীয় অর্থসম্পদ থেকেও উত্তম। " (সুরা ইউনুসঃ ৫৮)
নিয়ামত পেলে শোকরিয়া করার জন্য খোদ আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কোরআনে নির্দেশ দিয়েছেন। শোকর গোজার করা কৃতজ্ঞদের আলামত, লক্ষণ।
সমগ্র কুল কায়েনাত প্রতিনিয়ত মহান আল্লাহর অশেষ, অগুনিত নেয়ামতে আপাদমস্তক ডুবে রয়েছি। এবং এটা নিঃসন্দেহে সত্য যে আমাদের প্রাপ্ত সকল নিয়ামতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হল রাসুলে কারীম, রাউফুর রহিম, ইমামুল আম্বিয়া, তাজেদারে শাফায়াত, রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত আহমাদ মুজতবা, মুহম্মদ মোস্তফা (দঃ) নবীর দুনিয়ায় বেলাদত শরীফ! সুবহানাল্লাহ!
রাহমাতুল্লিন আলামিন নবী (দ) শুধু মানবকূলের জন্যই নিয়ামত নন, কুল কায়েনাতের জন্যই তিনি নিয়ামত। যতটুকুর জন্য আল্লাহ তা'য়ালা 'রাব্বুল আলামিন', ঠিক ততটুকুর জন্যই রাসুলে আকরাম (দ) 'রাহমাতুল্লিল আলামিন'! সুবহানাল্লাহ।
অর্থাৎ এই সুমহান নিয়ামত থেকে সৃষ্টিজগতের কোনকিছুই বাইরে নয়।
সুতরাং রাসুলে করীম (দ)'র মত এতবড় নিয়ামত পৃথিবীর আর কিছুই হতে পারেনা। আর এমন নিয়ামতের শোকর মহাসমারোহে হওয়ায় স্বাভাবিক নয়কি?
আল্লামা শাহাবুদ্দীন ইবনে হাজর হায়তামী (রহঃ) বলেন, খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগেও ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ (দ) পালন করার রীতি প্রচলন ছিল। যেমন-
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি ‘মিলাদুন্নবী’ (দ) পালন করার জন্য এক দিরহাম অর্থ খরচ করবে, সে ব্যক্তি জান্নাতে আমার সাথী হবে”।
হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি ‘মিলাদুন্নবী’ (দ)'কে তাজীম ও সম্মান করলো, সে যেন ইসলামকেই জীবিত রাখলো”।
হযরত ওসমান (রাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি ‘মিলাদুন্নবী’ (দ) পালন করার নিয়তে এক দিরহাম অর্থ খরচ করলো, সে যেন বদর ও হোনাইনের যুদ্ধে শরীক হলো”।
হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি ‘মিলাদুন্নবী’ (দ)কে সম্মান করবে এবং মিলাদুন্নবী পালন করার উদ্যোক্তা হবে, সে দুনিয়া থেকে (তওবার মাধ্যমে) ঈমানের সাথে বিদায় হবে এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। " সুবহানাল্লাহে ওবেহামদিহি!
খোলফায়ে রাশেদীনের অভিমত ও আমল আমাদের জন্য একটি শক্ত দলীল।
রাসূলে মক্ববুল (দ)'র বেলাদাতের রাত্রে তাঁর আগমনের সু_সংবাদ শুনে খুশী হওয়ার কারনে অভিশপ্ত কাফের আবু লাহাবের শাস্তি যদি হালকা করা হয়, তাহলে একজন মুসলমান যদি খুশী হয়ে সাধ্যমত অর্থ-সম্পদ ব্যয়, তাহলে প্রতিদান কেমন হতে পারে! তাই মহাসমারোহে নবী পাওয়ার শোকর করা ঈমানের লক্ষণ, কৃতজ্ঞদের কাজ।
পক্ষান্তরে এর বিরোধিতা করা নাফরমানদের কাজ। কেননা ইবলিশ তার জীবনে যেই চারবার তাড়স্বরে আর্তনাদ করে কেঁদেছিল তন্মধ্যে একটা সময় ছিল রাসুলে পাকের বেলাদত শরীফের সময়। সুতরাং নবীর আগমনে ইবলিশের গায়েই আগুন জ্বলেছিল, কষ্ট পেয়েছিল।
কোরআনের অপর জায়গায় আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা'য়ালা অকৃতজ্ঞদের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন- ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা আদায় কর তবে আমি অবশ্যই তোমাদের নেয়ামত বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। ’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৭)
সুতরাং মিলাদুন্নবী (দঃ) উপলক্ষে জুলুস করা, দরুদ পড়া, রোজা-নামাজ পালন করা আল্লাহর শোকরিয়া আদায়ের নামান্তর। আর আল্লাহর হুকুম পালন করা নিঃসন্দেহে ইবাদত।
লেখক -শেখ খালেদ হোসেন