৩:৪৮ পিএম, ১ অক্টোবর ২০২৩, রোববার |
| ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫
এম.শাহীদুল আলম: বিশ্বের এমন কোনো দেশ নেই যেখানে বেকারত্বের অভিশাপ নেই।
দেশ যতই উন্নত কিংবা অর্থনৈতিক সচ্ছল হোক না কেন, যদি কর্মক্ষেত্র না থাকে তাহলে সে দেশ এই অভিশপ্ত গ্লানিমোচন করতে পারে বেকার ভাতা প্রদান করে।
তার উদাহরণও রয়েছে অনেক দেশের। আমার দেশ গরীব, আমাদের জনসংখ্যার আধ্যিকের কারণে কর্মক্ষেত্রও অনেক কম। যারা কর্মক্ষেত্র অপ্রতুলতার কারণে কর্মহীন তাদেরকে "বেকার" বলতে পারি? মোটেও নয়, কেননা সেটা একমাত্র দেশে পর্যাপ্ত কাজের সুযোগ না থাকায়, আবার সুযোগ থাকলেও নূন্যতম। তাহলে বেকারের সংজ্ঞা কি? সাধারণত আমরা বেকার বলতে সেটাই বুঝি যাদের কোনো কর্ম নেই, ঘরে বসে বসে বাবার হোটেলে খাওয়াকে বুঝে নিই।
ইহার ধরণও দুটো জানা রয়েছে। ১. শিক্ষিত বেকার ২. অশিক্ষিত বেকার। এই দুটো পয়েন্ট সম্পর্কে যথেষ্ট ধারনা থাকলেও মূলত আরও সুস্পষ্ট ধারনা নেয়া যাক...আসলে একজন সুস্থ-সবল লোক কখনো বেকার নয়, যাদের হাত-পা-চোখ অচল কিংবা সচল নয় যাদের কাজ করার সামর্থ্য নেই, যাদেরকে একটা কাজের জন্য যে সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয় তাঁর পেছনে তাহার অধিক সময় ব্যায় হয়, সমাধানের চেয়ে আরো জটিল করে তুলে বস্তুত তারাই বেকার।
এমন কোনো পরিবার আছে? যে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা সংসারের কোনো কাজ করে না? নিশ্চয়ই করে। হয়তো সে নির্দিষ্ট বেতনভূক্ত কোনো কর্মে লিপ্ত নয় কিংবা নয় কোনো অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের কেউ, সে-তো পরিবারের হয় আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করতে সাহায্য করছে নাহয় সংসারের টুকিটাকি কাজে তাহলে কেন বেকার বলে সম্মোধন করছি? বেকারতো তারাই, যারা সহজ কাজকে জটিল করে তুলে আর তিলকে তাল বানিয়ে ফেলে। যার মাধ্যমে কোনো কাজের ফিডব্যাক পাওয়া যাবেনা, সহজে যে কাজ করা যায় সে কাজ করতে গিয়ে/যেয়ে ক্ষতিই বেশি করে তাদেরইতো বেকার বলে আখ্যা দিয়ে থাকি এখানে কিন্তু শিক্ষিত-অশিক্ষিতের কথাটা আসেনা ইহা উভয়ের মধ্যেই হতে পারে। বেকারত্ব হওয়ার পেছনের গল্প বড়োই আজিব, কেননা কেউ জন্মগতভাবে বেকার হয়না কারো জন্ম ধনাঢ্য পরিবারে, কারো জন্ম কৃষক পরিবারে আবার কারো জন্ম বস্তিতে তাহলে প্রথম দিকেই বুঝে নিতে পারি এই তিন পরিবারে জন্ম নেওয়া সন্তান গুলো তাদের কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে কোন পর্যায়ে যাবে।
হয়তো প্রথমজন পারিবারিক অর্থ-বিত্তের প্রাচুর্যে ভরা আর অতি আহ্লাদের কারণে যা আশা করেছিলো তার উল্টোটায় হল। দ্বিতীয়জনের ক্ষেত্রে দেখা গেলো যা কেউ আশা করেনি তা ঐ পরিবার থেকে করে হয়তো ইতিহাসে নাম লিখালো নাহয় গর্ব করার মতো দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। তৃতীয়জনের ক্ষেত্রে অতটুকু আশা করা যায় না কেননা যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়, কনকনে শীতের তীব্রতা যাদের শরীরকে ঝিমিয়ে ফেলে, খরা মৌসুমে যাদের মাথার উপর সহ্য করে নিতে গরমের অসহ্য যন্রনা, বৃষ্টি-বাদল দিনে মেঘের গর্জনে আর প্রবল বৃষ্টিতে প্লাস্টিকের ঘেরা ঘরে ফোঁটা ফোটা পানিতে বসবাস যাদের জীবন কাটে তারা কিইবা করবে? তাদের দোষ নেই তা বলা যাবেনা কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে এরাই এগিয়ে, ফলে বেকারের সংখ্যা বেড়ে চলছে।
দেশের মেধাবীরা দেশে কিছু করতে পারেনা, কারণ তাঁরা বড় ডিগ্রি অর্জন করতে বিদেশে যেতে পারেনা। পারলেও গরীব ঘরের সন্তান হলেতো কথায় নেই জীবনের চাকা এখানেই শেষ। বিশেষ করে বড়লোক পরিবারের সন্তানরা যেহেতু ভিনদেশে পড়াশোনা করে সেহেতু বড়লোক পিতা আর এই দেশে শিল্প-কারখানার,ক্লিনিক,মেডিকেল গড়ার দিকে নজর দেন না,সন্তান বাহিরে চিন্তা কিসের, অথচ একটা শিল্প-কারখানা মানেই কর্মসংস্থান। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করার পেছনে যেসব পন্য গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে সেসবের উপরও বিদেশিদের সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্রের স্বীকার।
এই দেশের পোষাক শিল্পের বেশ্ নাম ঢাক রয়েছে সেটিও নষ্ট করার চক্রান্ত চলে, ফলে হাজার হাজার শ্রমিক কর্মহীনতায় ভুগবে তাহলে ওদের বেকার বলা শোভা পাবে? যেখানে মিছিল-মিটিং সেখানে হাজার হাজার লোকের সমাগম। তখন বলি ওসব "বেকার" কতগুলো মানুষ আছে যাদেরকে অর্থের বিনিময়ে সমাগম করা হয়েছে।
স্বচক্ষে যা দেখা যায় বাস্তবতা বলে ভিন্নতা। কেননা ঐ লোক সমাগমে আসা মানুষগুলোর নেতা আদর্শের টানে, প্রিয় নেতার ডাকে সাড়া দে, শত কর্ম ফেলে মিটিং-মিছিলের লোক সমাগম সফল হতেই হবে এটাই থাকে অন্তরে দৃঢ় প্রত্যয়। আমাদের মাঝে আরো একটা ব্যাপার লক্ষ করা যায়, তাহলো অসাধারণ জ্ঞানের অধিকারী কিন্তু কাউকে বুঝানোর ক্ষমতা নেই তাহলে এই জ্ঞানার্জন বেকার বললেই চলে ঐ জ্ঞান দিয়ে কি হবে? যদি জ্ঞানের আলো দেশের জন্য ছড়িয়ে না দি।
সুতারাং বেকাররা বেকার নয় তাদের সুযোগের অভাব,শিক্ষাগত যোগ্যতার সাথে কর্ম মিলেনা, মিললেও বেতন দিয়ে সংসার চলার চিন্তা সর্বোপরি কর্মকে দূরে রেখে বেকারের ডায়েরিতে যোগ করি।
লেখক: কলামিস্টঃ মুহাম্মদ শাহীদুল আলম।
সিনিয়র শিক্ষক
নানুপুর মাজহারুল উলুম গাউছিয়া ফাযিল ডিগ্রী মাদরাসা ।