২:৪৯ পিএম, ৪ অক্টোবর ২০২৩, বুধবার |
| ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫
এসএনএন২৪.কমঃ আমার সংসার, আমার দেশ, আমার পৃথিবী। সুস্থ থাকতে চাই, পরিবারের সদস্যদের সুস্থ রাখতে চাই, চাই প্রতিবেশীকেও। ঘরেই থাকতে চাই, বাইরে গেলে সামাজিক দূরত্ব মানতে চাই। কিন্তু কীভাবে?
আমাদের দেশে করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর সামাজিক দূরত্ব মানার বিষয়টি নিয়ে অনেক আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই সমালোচনাও করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রলও দেখা গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য নানারকম উদ্যোগ নিলেও বাস্তবায়ন তেমন হয়নি বলা চলে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ দূরত্ব নিশ্চিত সম্ভব হচ্ছে না কেন?
একটু আড়াই যুগ আগের কথা বলছি। তৃণমূলের গণমাধ্যমকর্মী থাকা অবস্থায় ক্যামেরায় ছবি তুলেছি অসংখ্য। "বাঁশের মাচায় করে কয়েকজন কাঁধে করে জরুরি রোগীকে উপজেলা সদরের হাসপাতালে আনা হতো চিকিৎসার জন্য। " কিন্তু সেই বাঁশের মাচা কিন্তু নাই। তবে প্রত্যন্ত গ্রাম শব্দটা গণমাধ্যমে ব্যবহৃত হয় এখনো। তথ্য প্রযুক্তির যুগেও গ্রামের মানুষ কেন করোনাভাইরাস মহামারি থেকে রক্ষা পেতে সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। শহরে কি সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত হচ্ছে? না হওয়ার পেছনে তাহলে কি সচেতন হওয়ার অভাব?
আমার বেশ কয়েকদিনের অভিজ্ঞতা যা হলো, সচেতন না হওয়ার পেছনে কোনো অভাব না। যারা সামাজিক দূরত্ব মানছেন না, তারা এটাকে এক ধরণের বাহাদুরি ভাব মনে করছেন। কারও কারও বেলা একরোখা স্বভাব। আমার স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি আছে, পরিবারেরও, অনেকেরই থাকতে পারে। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা গণমাধ্যমে যখন দেখি বাইরে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না, তখন ভাবিয়ে তোলে। প্রথম যেদিন শনাক্তের ঘোষণা দেয়া হলো সেই দিন থেকে সরকারের বিধিবিধান মেনে চলার চেষ্টা করেছি। একেবারেই অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হইনি। একটা পরিবারের অনেক রকম চাহিদা থাকে সবার। আমারও আছে, আপনারও। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গণমাধ্যম ও মাইকিং ছাড়াও আমার মনে হয় প্রত্যেক ঘরে ঘরে এই বার্তা নিশ্চয় সবাই জানি যে, ঘরের বাইরে গেলে কিভাবে চলতে হবে? সামাজিক দূরত্ব কী?
এখনো কেন আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছি না। প্রিয় জন্মভূমির নিয়ম না মানা এসব মানুষদেরকে কিছু কি বলার আছে।
করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখছেন। পরামর্শ, সচেতন হওয়ার উপায়সহ অনেক কিছুই। ভালোই লাগে। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার সন্তোষপুর বনাঞ্চল। এখানের বানরদের জন্য খাবার করোনার সময় সরকারের পক্ষ থেকে বেশি বরাদ্দ হয়েছে। শুনে আনন্দিত হয়েছি।
এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্বিত সদস্যদের সবজি বাজার, পুলিশের পজেটিভ অনেক বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দেখে ও পড়ে আনন্দিত হই। দেশের ক্রান্তিকালে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেভাবে মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন, তাতে গর্ববোধ লাগে। অনেকেই নীরবে নিভৃতে মানুষের পাশে আছেন। তারা গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হউক বা ফেসবুকে আত্মপ্রচার কামনা করেন না। নীরবে নিভৃতে মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন।
আমার বাবা, প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেও সার্টিফিকেট নেননি। অনেক সময় প্রশ্ন করতাম বাবাকে। কেন নেননি? উত্তর দিতেন, মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেটের স্বীকৃতি দরকার নাই। করোনার সময় কিছুটা বুঝলাম বাবা কেন এই কথা বলতেন। অনেকেই আছেন নীরবে নিভৃতে অসহায় মানুষের পাশে থাকতে পছন্দ করেন।
কবি কাজী নজরুল ইসলামের মানুষ কবিতার:
‘গাহি সাম্যের গান- মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান। ’ হ্যাঁ, মানবসেবা। নিভৃতচারী থেকে যারা করোনা মহামারির সময় মানুষের সেবা করছেন, তাদেরও জানাই স্যালুট।
৩ জুন ২০২০। দুপুরে বাসা থেকে বলা হলো কিছু জরুরি ওষুধ ও অল্প বাজার লাগছেই। ফার্মেসিতে গিয়ে শুনলাম, কর্ণধারসহ চার সহোদর করোনার সাথে যুদ্ধ করছেন। বাজারে গেলাম, বেশিরভাগ মানুষ আমার মনে হয় ইচ্ছা করেই শরীরের ওপর এসে পড়ছেন। ভাবটা এরকম যে, আমি দূরে থাকছি কেন? পণ্য ক্রয় করার পর টাকা হাতে না দিলে বা ফেরত হাতে না নিলে দোকানদার যেভাবে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন, মনে হয় আমি অনেক বড় অপরাধ করছি। বাইরে বের হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে চাইলেও বিরক্ত করেন অনেকেই। রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসা বা যাওয়ার সময় একজন (অনূর্ধ্ব আঠার) খুব কাছে এসে শরীরে ঘেঁষে পড়েন। বয়স্করাও কেউ কেউ। কৌতূহলী হয়ে এক তরুণকে জিজ্ঞেস করলাম এরকম করার মানে কী? উত্তর পেলাম, এতো নিয়ম মানলে আপনি ঘরেই থাকেন। হ্যাঁ আমি ঘরেই থাকতে চাই। কিন্তু নিয়ম না মানা কেউ কি আছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার, বাজার ও ওষুধ একটু দিয়ে যাবেন ? না, তাদের কাউকে এমন কাজে পাওয়া যাবে না।
তারপর বাজার থেকে শৈশবের খেলা দাড়িয়াবান্দার (আমার জেলা ময়মনসিংহের ভাষা) মতো বাসায় ফেরা। সামাজিক দূরত্ব নিয়ে সরকারের সমালোচনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখতে আর কত সময়। একটু পজিটিভ ভাবুন, দেখুন চারপাশে, মানুষ কেন একটু দূরত্ব রাখছেন না। এছাড়া ঘরে থাকুন প্রোফাইল দিয়েছেন যারা, ফেসবুকে লাইভ করে ঘরে থাকা ও সামাজিক দূরত্ব মানার সচেতন করার কথা বলছেন, নিশ্চয় ভালো দিক। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাস্তবে কি বাইরে গিয়ে পারছেন মানতে বা কাউকে মানাতে ? কিন্তু আমরা নিজেরা সব বুঝেও যখন মানছি না, তাহলে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনার পাশাপাশি আসুন আমাদের নিজেদের দোষের সমালোচনাও করি।
লেখক আশরাফ সিজেল
গণমাধ্যম কর্মী